- কার্টেসি: আহমাদ ইশতিয়াক/ বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র
গণহত্যা ১৯৭১: গোলাহাটে যা ঘটেছিল
১৩ জুন রাত দেড়টা। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিনত বাবুসহ অন্যদের নিয়ে যাওয়া হয় রেলস্টেশনে। সেখানে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এরই মধ্যে জড়ো করা হয় বেশকিছু পরিবারকে। একটি ট্রেনের দুটি বগিতে তোলা হয় পুরুষদের। দুটিতে রাখা হয় মহিলা ও শিশুদের। ট্রেনের অধিকাংশই ছিল বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও মাড়োয়ারি। স্টেশনে বিনত বাবু দেখা পান তার মা তরদেনি দেবী ও ছোটবোন সাবিত্রীর।
পুরুষরা যেন পালাতে না পারে ওই কারণে বগিতে সবাইকেই বিবসন করে রাখা হয়। সকাল সাতটার দিকে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে অজানা গন্তব্যে। বন্ধ করে দেয়া হয় ট্রেনের দরজা-জানালাগুলো। বগির ভেতর সবাই ভয়ে জড়সড়। কিলোতিনেক চলার পর ট্রেনটি গোলাহাটে এসে থেমে যায়। এরপরই শুরু হয় সেই নারকীয় হত্যার উৎসব।
বিহারি পুলিশ ও পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যুক্ত হয় মুখে কাপড় বাঁধা একদল বিহারি। বগি থেকে তারা একে একে নামিয়ে তলোয়ারের আঘাতে কচুকাটা করে একেকজনকে। বেয়োনেটের খোঁচায় ছিন্নভিন্ন হয় কোলের শিশুদের দেহ। কখনো যুবক, কখনো বৃদ্ধ, কখনোবা শিশুর চিৎকারে ভারী হয়ে ওঠে গোলাহাটের বাতাস।
নারকীয় এ হত্যার দৃশ্য দেখে বগির ভেতর ছটফট করেন বিনত বাবু। কয়েকজনের সঙ্গে তিনিও অন্য পাশের জানালা দিয়ে দৌড়ে পালান। পেছন থেকে চলে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিবৃষ্টি। গুলিবিদ্ধ হয়ে আছড়ে পড়েন কয়েকজন। কিন্ত দৈবক্রমে বেঁচে যান বিনত বাবু, রামলাল দাস, তপনকুমার দাসসহ আরও প্রায় ২০ জন।
নিজে বেঁচে গেলেও ওই দিনের গণহত্যায় শহীদ হন বিনত বাবুর মা, বাবা আর বোন। আবেগভরা কন্ঠে গোলাহাটের গণহত্যার কথা এভাবেই বলছিলেন প্রাণে বেঁচে যাওয়া সুবত আগরওয়ালা। সৈয়দপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়ে বসে কথা হচ্ছিল তাদের কয়েকজনের সঙ্গে।
কথা হয় শহীদ রামেশ্বর আগরওয়ালার ছেলে নিজুর সঙ্গেও। গোলাহাটের গণহত্যায় শহীদ হন তাদের পরিবারের নয়জন। স্মৃতি হাতড়ে নিজু জানান ওই সময়কার কিছু কথা।
৭ এপ্রিল ১৯৭১। নিজুর বয়স তখন ১০। সকালের দিকে খানসেনারা হানা দেয় তাদের বাড়িতে। ধরে নিয়ে যায় তার বাবা ও দুই ভাই পুরুষোত্তম ও বিমন কুমারকে। ‘তোম লোককো মেজর সাব বোলাতায়ে’। এক হাবিলদারের কন্ঠ আজও নিজুর কানে বাজে। পরে তাদের খোঁজ মেলে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে।
বাবা ও ভাইদের জন্য প্রতিদিন বাড়ি থেকে নাস্তা নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছে দিতেন নিজু। গণহত্যার দিন নাশতা হাতে ফিরে আসেন তিনি। তার বাবা ও ভাইদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভারতে। খবর পেয়ে নিজু ছুটে যান স্টেশনে। কিন্তু ততক্ষণে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। স্টেশন থেকে গোলাহাটের দিকে ট্রেনটিকে থামতে দেখে নিজুও ছুটে যান ওদিকে। ২০০ গজ দূর দাঁড়িয়ে দেখতে পান নারকীয় সেই হত্যাযজ্ঞটি।
নিজু আক্ষেপ করে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পরও গোলাহাটের নিরীহ নিরপরাধ মানুষের আত্মত্যাগের ইতিহাস তেমন তুলে ধরা হয়নি দেশবাসীর কাছে। এখনও রক্ষা করা হয়নি বধ্যভূমির জায়গাটিকে। অনেক আন্দোলনের পর বেশ কয়েকবছর আগে শহীদ স্মরণে সেখানে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিসৌধ। কিন্তু রাষ্ট্র তো ওই শহীদের তালিকা করেনি। শহীদরা বেঁচে আছে তাদের আপনজনদের মনের সৌধে।”

শহীদ রামেশ্বর আগরওয়ালার ছেলে নিজু আগরওয়ালা
সৈয়দপুরের গণহত্যা নিয়ে কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুরাদ হোসেনের সঙ্গে। বাবার চাকরির সুবাদে একাত্তরে তারা থাকতেন সৈয়দপুর শহরে, আতিয়ার কলোনির এল-৭৬-বি নম্বর কোয়ার্টারে। বাংলাদেশের পতাকা না নামানোর অপরাধে একাত্তরে তার মা সুফিয়া খাতুনকে জবাই করে হত্যা করে বিহারিরা।
সৈয়দপুরে বিহারিদের তখনকার অবস্থা সম্পর্কে তিনি বললেন যেভাবে, “সৈয়দপুরে বিহারিরাই নেতৃত্ব দিত। বঙ্গবন্ধুর অনুরাগী বাঙালিদের ওরা ভালো চোখে দেখত না। প্রকাশ্যে শেখ মুজিবকে ‘গাদ্দার’ বলত, গালিও দিত। বাঙালিদের প্রতি বিহারিদের নির্মমতার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে মুক্তিযুদ্ধে। তাদের বর্বরতা আর হিংস্রতার কথা মনে হলে এখনও বুকের ভেতরটা খামচে ধরে।
ওদের নেতা ছিল মতিন হাশমি, সৈয়দপুর কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। পুরো বিহারি এলাকার নেতৃত্ব দিতেন। প্রকাশ্যে তিনি ঘোষণা দেন, ‘২৩ মার্চ যুদ্ধ হবে। বোঝাপড়া হবে এদেশে আমরা থাকব নাকি তোমরা (বাঙালিরা)।’
মূলত ২২ মার্চ রাতেই গোলাহাটে যুদ্ধ শুরু হয়। বিহারিদের মধ্যে যারা ছুরি এনেছে তারা একদিকে, তলোয়ার, বল্লম, বন্দুক আর লাঠিওয়ালারাও এক-এক দিকে ভাগ হয়ে অবস্থান নেয়। এদিকে আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে বাঙালিরাও লাঠিসোটা নিয়ে চলে আসে। রাত থেকেই মারামারি শুরু হয়। গোলাহাটে প্রথম আগুন জ্বলে। ওরা এগিয়ে আসলে গ্রামের দিক থেকে আসা বাঙালিদের সঙ্গে ফাইট হয়। রক্তাক্ত প্রান্তরে মারাঠাদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ হয়েছিল। ওখানে কারা থাকবে— মুসলমানরা নাকি মারাঠারা। সৈয়দপুরে আমাদের যুদ্ধটাও ওরকমই ছিল।
২৩ মার্চ সারাদিন যুদ্ধ চলে। ২৪ মার্চ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সেনারা ক্যান্টনমেন্ট থেকে সিভিল ড্রেসে বেরিয়ে আসে। মাথায় গামছা বেঁধে তারা মেশিনগান দিয়ে ফায়ার শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা হত্যাযজ্ঞ ঘটায় ১৩ জুন তারিখে।”
মুরাদ আক্ষেপ নিয়ে বলেন, “একাত্তরে গণহত্যায় যুক্ত বিহারিদের বিচার এখনও আমরা করতে পারিনি। আমার মায়ের হত্যাকারীর বিচার হয়নি। এটা মেনে নেওয়া কঠিন। স্বাধীনতার জন্য মা জীবন দিয়েছেন। অথচ রাষ্ট্র শহীদদের তালিকা করেনি। ফলে জীবন দিয়েও তিনি প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি স্বাধীনতার জন্য তার অবদানকে। এটি সত্যিই কষ্টের।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ হোসেন
সৈয়দপুর স্টেশন থেকে গোলাহাট কবরস্থান পেরোতেই দেখা যায় ৩৩৭ কি.মি. চিহ্নিত ছোট্ট একটি রেলব্রিজ। ব্রিজের পশ্চিম পাশে পানিশূন্য একটি বড় ডোবা। এক সময় আশাপাশের বিহারিদের জ্বালানির প্রয়োজনে গোবর শুকানো আর মলত্যাগের উপযুক্ত স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতো জায়গাটি। এখানেই দেশের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছিল চার শতাধিক নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষ। যাদের আত্মত্যাগে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা।
গোলাহাট গণহত্যায় শহীদদের মধ্যে যাদের নাম জানা যায় তাদের কয়েকজন হলেন, ‘যমুনা প্রসাদ, শান্তি দেবী, দ্বারকা প্রসাদ, ললিত কুমার, দিলীপ কুমার, সলিল কুমার, মুন্না, প্রদীপ কুমার আগরওয়ালা, সুমিত্রা দেবী, উষা আগরওয়ালা, সুনীতা, রিতা, রামেশ্বরলাল আগরওয়ালা, পুরুষতোমলাল আগরওয়ালা, বিমল কুমার, আগরওয়ালা, মুরলীধর আগরওয়ালা, দুর্গাপ্রসাদ আগরওয়ালা, নিতা কুমারী, রাজেশ কুমার আগরওয়ালা, পুষ্প দেবী, শান্তি দেবী, মাঙ্গিলাল আগরওয়ালা, দোয়ারকা প্রসাদ আগরওয়ালা, উষা দেবী, নিতা দেবী, সরোজ দেবী, ললিতকুমার আগরওয়ালা, রঞ্জিত কুমার আগরওয়ালা, মানিক কুমার আগরওয়ালা, তিলোক কুমার আগরওয়ালা, কিশোরকুমার আগরওয়ালা, রাধাকৃষ্ণ আগরওয়ালা, দামোদর প্রসাদ আগরওয়ালা, গোদাবরী দেবী আগরওয়ালা, চন্দা দেবী আগরওয়ালা, ললিতা দেবী আগরওয়ালা, রাজকুমারী দেবী আগরওয়ালা, শহীদ পুনমচাঁদ কেডিয়া, চাপলা প্রসাদ কেডিয়া, সুরেশ কেডিয়া, মিতা কেডিয়া, লক্ষ্মী আগরওয়ালা, অশোক আগরওয়ালা, মুন্না আগরওয়ালা, লীলা আগরওয়ালা, মহোন লাল ঘোষ, পুষ্প রাণী ঘোষ ও কার্তিক ঘোষ।’
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের পাশাপাশি অবাঙালি বা বিহারিদের অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞের ইতিহাসও উঠে আসা প্রয়োজন বলে মনে করে শহীদ পরিবারগুলো। পাশাপাশি শহীদদের তালিকা না করার দায়ও রাষ্ট্র এড়াতে পারে না বলে জানান তারা।
যাদের রক্তে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা, স্বাধীন দেশে ওই সকল শহীদদেরকেই আমরা ভুলে গেছি! এমন কষ্টের অনুভূতি প্রায় প্রতিটি শহীদ পরিবারের হৃদয়ে আজও রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছে। কিন্তু স্বাধীন এই দেশে এই রক্তক্ষরণ আর কতদিন ঘটবে?
ছবি: সালেক খোকন
অপারেশন খরচখাতা : গোলাহাটে প্র তা র না র ফাঁ দে ফেলা এক গ ণ হ ত্যা র নাম

দিনটি
ছিল ১৯৭১ সালের ১৩ জুন।মধ্যরাতে সৈয়দপুর রেলস্টেশনের অস্পষ্ট আলোয় তারা
নিঃশব্দে ট্রেনে উঠতে থাকেন। যাদের অধিকাংশই ছিলেন মাড়োয়ারি ও বাঙালি
হিন্দু। তারা ছিলেন উদ্বিগ্ন, প্রাণভয়ে আতঙ্কিত। একে অপরের পরিচিত হওয়া
সত্ত্বেও কেউ কারো সঙ্গে কথা বলছিলেন না। ট্রেনটি সৈয়দপুর রেলস্টেশন থেকে
চিলাহাটি সীমান্ত হয়ে ভারতের জলপাইগুড়ি যাবে। ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় সময়
যেন কাটছে না। একটি ক্ষণ যেন একটি যুগের সমান।
১৩ জুন সকাল ১০টায় ট্রেনটি ছাড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী তপন কুমার দাস কান্ঠু ও
বিনোদআগরওয়ালার বর্ণনায় জানা যায়, ট্রেন ছাড়ার পর সব জানালা-দরজা বন্ধ
করে দেওয়া হচ্ছিলো। ট্রেনট ধীরগতিতে দুই মাইলের মতো পথ অতিক্রম করার পর
শহরের গোলাহাটের কাছে এসে থেমে যায়। এরপর কম্পার্টমেন্টের দরজা খুলে ভেতরে
রামদা হাতে কয়েকজন বিহারি প্রবেশ করে। একইভাবে প্রতিটি কম্পার্টমেন্টে
উঠে পড়ে রামদা হাতে বিহারিরা। বাহিরে ভারি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে পাকিস্তানি
বাহিনী গোটা এলাকা ঘিরে রাখে, যাতে কেউ পালাতে না পারে। বিহারিরা প্রধানত
রামদা দিয়ে কুপিয়েই হত্যাযজ্ঞ করে। ওই হত্যাযজ্ঞের নাম দেওয়া হয়
অপারেশন খরচাখাতা।
এভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর অপারেশন খরচাখাতায় ৪৩৭ জন নিরীহ হিন্দু
মাড়োয়ারিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাযজ্ঞ থেকে কোনোরকমে সেদিন
প্রাণে বেঁচে যান প্রায় ১০ জন যুবক। তারা ট্রেন থেকে নেমে ঊর্ধ্বশ্বাসে
দৌড়ে দিনাজপুর হয়ে ভারতে পালিয়ে যান।
নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর শহরে বিপুলসংখ্যক মাড়োয়ারি বসবাস করতেন। ভারতের
বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক, যারা ১৯৪৭ সালে
দেশবিভাগের বহু আগেই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুরে এসে এই
শহরে থেকে যান।
১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ রাত থেকে সৈয়দপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের
দোসর সৈয়দপুরের বিহারিরা বাঙালি নিধন শুরু করে। মহল্লায়-মহল্লায় ঢুকে
নেতৃস্থানীয় বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। এ অবস্থায় আতঙ্কে দিন
কাটাচ্ছিল শহরের মাড়োয়ারিপট্টির বাসিন্দারা। ২৪ মার্চ থেকে সৈয়দপুর
শহরের বাঙালি পরিবারগুলো পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
সৈয়দপুরে অনেক শান্তিতেই ছিলো ওরা। ১৮৭০ সালে ব্রিটিশ রাজের রেলওয়ের
ওয়ার্কশপ, পরে পাটকলসহ নানান কলকারখানা গড়ে উঠায় এলাকাটি বাণিজ্যিক নগর হয়ে
উঠে। মূলত ব্যবসা, সমাজসেবায় প্রাধান্য ছিলো সিংহানিয়া, কেডিয়া, আগরওয়ালা
পরিবারের হাতে। এই পরিবারের হাতে গড়া “তুলশিরাম বালিকা বিদ্যালয়” এর
প্রতিষ্ঠাতা সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী ও শীর্ষ ব্যক্তিত্ব
তুলশীরাম আগরওয়ালা, নবনির্বাচিত এমপিএ ডাঃ জিকরুল হকসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ
নেতা রেলের কয়েকজন অফিসারের সাথে ব্যবসায়ী যমুনা প্রসাদ কেডিয়াদের আর্মি
উঠিয়ে নিয়ে যায়। ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে রংপুর নিসবেতগঞ্জ নিয়ে ব্রাশফায়ার করে
মেরে ফেলা হয়। শহরটা নেতা শূন্য হয়ে যায়।
মাড়োয়ারিপট্টিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিহারিরা মাড়োয়ারিদের
বাসায় বাসায় চালায় লুটতরাজ। প্রতিবাদ করার মতো কেউ ছিলো না, অন্যায়ের
প্রতিবাদ করতে গিয়ে আর্মির হাতে ধরা পড়েন সাতনালার চেয়ারম্যান মাহতাব বেগ
(সৈয়দপুরে প্রতিরোধ যুদ্ধে প্রথম শহীদ, তৎকালীন দিনাজপুর জেলার চিরির বন্দর
থানার সাতনলা ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, বর্তমান আলোকদিহি ইউপি) পরে
বিহারীরা তার মাথা কেটে নিয়ে শহরময় আনন্দ উল্লাস করে।
এ সময় বিহারিরা মাড়োয়ারিদের ঘরে ঘরে ঢুকে চালায় লুটতরাজ। এপ্রিল পেরিয়ে
মে মাসেও ভয়াবহ নির্যাতন, লুটতরাজ, ধর্ষণ গণহত্যা থেমে থাকেনি সৈয়দপুরে।
বাঙালি অবাঙালি কেউই ছাড় পায়নি হানাদারদের কবল থেকে। মে মাসের শেষদিকে
মাড়োয়ারিদের সঙ্গে উপকারী সুলভ ভঙ্গিতে সাহায্য করার বাহানা করতে এগিয়ে
আসে বিহারী ও শান্তি কমিটির লোকেরা। তারা বোঝায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী
দেশপ্রেমিক। তারা যদি ভারতে চলে যেতে চায় সেই ব্যবস্থাও করা হবে।
ক্রমান্বয়ে বিহারিদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে মাড়োয়ারিদের।
এপ্রিলের ১২ তারিখ ২০০ জন মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী ডেকে এনে আটকে রাখা হয়েছে
ক্যান্টনমেন্টে। তাদেরকে দিয়ে সারাদিন এয়ারপোর্টের রানওয়ের জন্য মাটি
কাটানো হচ্ছে। পাশেই চকচকে রাইফেল হাতে পায়চারি করছে খানসেনা। একটু পর পর
একেক জনের ডাক পড়ছে মেজর গুল সাহাবের টেবিলের সামনে। তিনি শুনে নিচ্ছেন কার
কোন ব্যাংকে ডিপোজিট কতো, বাড়িতে কত ভরি সোনা আছে? লুকানো কোথায়? সব শুনে
তাকে জিপে তুলে ছুটছেন ব্যাংকে, বাড়িতে। ব্যাংক একাউন্ট আর সিন্দুক শূন্য
করে টিনের ট্রাংক ভর্তি টাকা আর গহনা নিয়ে বিজয়ের ভঙ্গিতে ফিরছে
ক্যান্টনমেন্টে! এরপর ডাক পড়ছে আরেকজনের… রাতে কোয়ার্টার গার্ডের ছোট্ট
কুঠুরিতে ঘুম আসে না ওদের, কখন না জানি আবার মাঝ রাতে দরজায় টোকা পড়ে,
“ফরেন বাহার আও, নিসবেতগঞ্জ যানা হ্যায়"। ১লা জুন থেকে এভাবেই চলছে আটক
হওয়া মাড়োয়াড়িদের আশা নিরাশার জীবন।
জুনের ১২ তারিখ মধ্য রাতে এয়ারপোর্টের মাটি ভরাটের কাজ থেকে অব্যাহতি
মিললো ওদের। মেজর গুল বলে দিলেন, যত দ্রুত সম্ভব নিজ নিজ পরিবার নিয়ে
সৈয়দপুর রেল স্টেশনে হাজির হতে, দেরী করলে ডাব্বায় (বগি) জায়গা মিলবে না।
মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ানো মানুষগুলোর মনে হঠাৎ আশার আলো ছড়ালো একটি
মাইকিং। শহরজুড়ে খান সেনা ও তাদের সহযোগী বিহারিরা জুনের ১০ ১১ ও ১২ তারিখে
মাইকিং করলো, যে সমস্ত হিন্দু মাড়োয়াড়ি ভারতে যেতে যাবার স্পেশাল ট্রেনের
ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রেনটি ১৩ জুন ১৯৭১ সকাল ৭ টায় সৈয়দপুর থেকে চিলাহাটি
হলদিবাড়ি সীমান্তের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। নিভন্ত প্রদীপে আশার আলো দেখা
দিলো, হিন্দু ও মাড়োয়াড়ী পরিবারগুলোতে আশার সঞ্চার হলো। লুটপাট হয়ে যাবার
পর, ঘরে সামান্য যা কিছু অবশিষ্ট ছিলো, তা গোছানো শুরু হলো। এবার হয়তো
নিরাপদ অঞ্চলে ঠাঁই হবে। এখন ঘরে ঘরে শুধু ১৩ তারিখের অপেক্ষা।
১৩ জুন ১৯৭১ রেলওয়ে স্টেশনে ঠিকই আসে বিশেষ ট্রেনটি। সৈয়দপুর রেল-কারখানা
থেকে ট্রেন র্যাকটি সকাল আটটায় স্টেশনের প্লাটফর্মে এসে দাঁড়ায়। গুঁড়ি
গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ওরা স্টেশনে পৌঁছলো, কিছুক্ষণের মধ্যে হিন্দু
মাড়োয়ারি পরিবারের প্রায় ৪৬৮ জন সদস্যও প্লাটফর্মে হাজির হলেন।
দিনটি ছিল রবিবার। আগের রাত থেকেই সাড়ে চাটশোর মাড়োয়ারি অপেক্ষমান
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ট্রেনে যদি জায়গা না পাওয়া যায় সেই আশঙ্কায় আগেই
হাজির হয়ে গিয়েছিলেন মাড়োয়ারিরা। ভোর পাঁচটার দিকে ট্রেন আসতেই ট্রেনের
চারটি বগিতে গাদাগাদি, হুড়োহুড়ি করে উঠে পড়েন মাড়োয়ারিরা। বাক্স পেটারা
আর মানুষে পূর্ণ তখন ট্রেন। অপেক্ষা কখন ট্রেন ছাড়বে। ট্রেন ছাড়ার আর কতো
দেরি। অপেক্ষার তর সইছেনা তাদের। মনে একদিকে উত্তেজনা, অন্যদিকে ভয় কাটিয়ে
প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়ার অপেক্ষা।
মেজর সাব কা হুকুম সবাই এক ডাব্বায় উঠা যাবে না। প্রথম দুই বগিতে পুরুষদের,
পরের দুটিতে নারী শিশুদের তুলে দিয়ে জানালা বন্ধ করতে বলা হলো। এর মাঝে
আলাদা করা নারীদের মাঝ থেকে ২০/২২ জন তরুণীকে আর্মি গাড়িতে করে
ক্যান্টনমেন্টে পাঠিয়ে দেয়া হলো। জীবনের মায়া প্লাটফর্ম দাঁড়ানো খানসেনার
সামনে ওদের নীরব করে রাখলো।
সকাল ১০টা, ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির মাঝে প্রিয় শহর পিছনে ফেলে স্পেশাল ট্রেন
যাত্রা শুরু করলো। জানালার ফাঁক দিয়ে প্রিয় জন্মভূমি দেখে নিলো অনেকেই।
কিছুক্ষণের মধ্যেই রেলওয়ে ওয়ার্কশপও পার হলো, চোখে স্বস্তির রেখা ফোটার
আগেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে কালভার্ট-337 মাঝে রেখে ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়েছে
(দুটি করে বগি দুইপাশে, মাঝে কার্লভার্ট) জানালা খুলে যা দেখা গেলো, তা
কারো কল্পনাতেও ছিলো না।
বিহারী ও রাজাকার ইজাহার আহমেদ, বিহারী নেতা কাইয়ুম খান ও বিপুলসংখ্যক
বিহারী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী সৈন্য উপস্থিত তখন গোলাহাটে সেই ট্রেনটিরই
অপেক্ষায়। রেললাইনের দুপাশে ভারি অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আর বড়
বড় ছোরা আর রামদা হাতে বিহারিরা ট্রেনকে ঘিরে রেখেছে। কেউ নামার আগেই
বিহারিরাই ট্রেনে উঠে এলো, ট্রেন থেকে সবাইকে নামতে বললো। কেউ একজন কারণ
জানতে চাইলে এলোপাথাড়ি কোপানো শুরু করলো। এক বৃদ্ধকে টেনেহিঁচড়ে ট্রেন থেকে
নামিয়ে কালভার্টের পাকার উপর দাঁড় করিয়ে এক কোপে ধড় থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন
করে দিলো, মাথাটা খালের মধ্যে গিয়ে পড়লো, পরে ধাক্কা দিয়ে দেহটা নয়নজুলীতে
ফেলে দিলো। নিমিষেই পুরো ট্রেনে মরণ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো।
ট্রেন থেকে একের পর এক যাত্রী নামিয়ে জবাই করতে থাকলো। কান্নাকাটি করা
শিশুদের মায়ের কোল থেকে কেড়ে রেলের পাতে অথবা কালভার্টের পাকা শানে জোরে
আছাড় দিয়ে মারলো। এ দৃশ্য দেখে এক মা তার দুধের শিশুকে বুকে আঁকড়ে ধরলে
মায়ের কোলেই কোপ দিয়ে শিশুটাকে দ্বিখণ্ডিত করে ফেললো। মৃতদেহগুলো ট্রেন
থেকে নামিয়ে সবুজ ঘাসের ওপর দিয়ে টেনেহিঁচড়ে খাল পর্যন্ত নেয়ায় দুপুর নাগাদ
বগিগুলোর মেঝে আর রেললাইনের পাশের সবুজ ঘাস মানুষের রক্তে লাল হয়ে গেলো।
মৃত্যুর বিভীষিকা দেখে জীবিতরা করজোরে মিনতি করলো, এত কষ্ট দিয়ে না মেরে
তাদেরকে গুলি করে মারা হোক। বিহারি ও রাজাকাররা উত্তরে বলেছিল, তোদের জন্য
সরকারের দামি গুলি খরচ করা হবে না। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শহীদ হন ৪৪৮
জন।
সরকারের মূল্যবান গুলি বাঁচিয়ে পাকি প্রেমিকেরা কসাইয়ের মতো জবাই
করে,খুঁচিয়ে বা আছাড় দিয়ে হত্যা করে লাশগুলো নয়নজলী খালে ছুড়ে ফেলতে
থাকলো। বাঁচার সব আশা ছেড়ে অভিশপ্ত ট্রেনের তরুণ যাত্রী কালটু (তপন কুমার
দাস), নিঝু আগরওয়ালা, শ্যামলাল আগরওয়ালা, বিনোদ আগরওয়ালা, শ্যামসুন্দর দাস,
গোবিন্দ চন্দ্র দাস মৃত্যুর অপেক্ষায় ধৈর্য হারালো। কান্টু দাস তার প্রিয়
দাদাকে মিনতি করেও পালাতে রাজি করতে পারলো না। স্ত্রী ছেলে মেয়েকে মৃত্যুর
মুখে রেখে নিজের জীবন বাঁচানোর মানে হয় না। বংশ রক্ষার আশায় দাদার কথা রাজি
হয়ে জানালা খুলে নিচে লাফ দিলেন তিনি, মাটিতে পড়েই পশ্চিম দিকে দৌড়, তার
সাথে নিঝু, শ্যাম, বিনোদ গোবিন্দসহ আরও ২০/২৫ জন। ঠা ঠা গুলির আওয়াজ কানে
এলো। কয়েক জন লুটিয়ে পড়েন। । কাদায় পিছলে পড়ার সময় মাথায় গরম বাতাসের ছোয়া
পেলেন, কিমতি গোলি টার্গেট ভেদ করতে পারেনি। তারমতো ভাগ্যবান ২১ জন পালিয়ে
বাঁচতে সক্ষম হন। সন্ধ্যা নাগাদ নয়নজুলী খালে নয়নের জল ফেলার মতো কেউ
অবশিষ্ট রইলো না, ততক্ষণে খালের পানি আর রেললাইনের পাশের সবুজ ঘাস লাল বর্ণ
ধারণ করেছে। খালে আর লাশ ফেলার মতো জায়গা না থাকায় তাদের জায়গা হলো
রেললাইনের পাশে হাঁটু পরিমান গর্তে। রাত ন'টা নাগাদ যাত্রীশূন্য ট্রেন
সৈয়দপুর ফিরে এলে, রক্তেভেজা বগিগুলো দ্রুত ধুয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়ে শেষ হয়
“অপারেশন খরচাখাতা”।
তবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তা ‘গোলাহাট গণহত্যা’ নামে পরিচিত। প্রাণে বেঁচে
যাওয়া বিনোদ আগরওয়াল জানান, কুপিয়ে হত্যার এই বীভৎসতা চোখের সামনে দেখে
কয়েকজন তাদের গুলি করে হত্যা করার জন্য অনুরোধ করেছিল। বিহারি ও
রাজাকাররা উত্তরে বলেছিল, তোদের জন্য পাকিস্তানের দামি গুলি খরচ করা হবে
না। তাদেরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।’
বিনোদ বলেন, ‘রেললাইনের দুই পাশে এক বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে হাঁটু সমান
গর্তে মরদেহগুলো ফেলে দেওয়া হয়। শিয়াল, কুকুর, শকুনে টেনেহিঁচড়ে তা
খায়।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গণহত্যার সময় হত্যাকারীরা ‘খরচাখাতা, খরচাখাতা’
বলে চিৎকার করছিলেন। ‘অপারেশন খরচাখাতা’ ছিল পাকিস্তানি সেনা, বিহারি ও
রাজাকারদের পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের নাম।
কয়েকটি সামাজিক সংস্থা ও সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কয়েক বছর আগে
সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। সৈয়দপুরের শহীদ পরিবারের
সন্তান, শহীদ বদিউজ্জামানের দৌহিত্র রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, ‘সৈয়দপুরে ৪
হাজারেরও বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলো
শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় তেমন কিছুই করেনি।’
ডা: আমৃতা কুমারী আগারওয়াল বলেন, কিছুদিন আগেও তারা জানতেন যে ওইদিনের
গণহত্যায় ৪৩৭ জন মারা গেছেন, কিন্তু খোঁজ করতে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা
বলে ৪৪৮ জন শহীদের কথা জানা যায়। ১৩ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি
মর্মান্তিক অধ্যায়ের ভয়াল কালো দিন। এমন অনেক ঘটনা আছে যা লোকচক্ষুর
অন্তরালেই থেকে যায়। অর্থাৎ সেসব ঘটনা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না অথবা
গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয় না। ১৩ জুন সৈয়দপুরের ‘গোলাহাট গণহত্যাকাণ্ড’
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তেমনই একটি মর্মান্তিক ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধ
আমাদের মহিমান্বিত করেছে। মর্যাদাবান জাতি হিসেবে আমাদের করেছে প্রতিষ্ঠিত।
অথচ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ মুক্তিযুদ্ধ
চলাকালে গোলাহাট গণহত্যা, চুকনগর গণহত্যা, জাতিভাঙা গণহত্যাসহ এমন আরও অনেক
নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে অজ্ঞ।
প্রাণে বেঁচে যাওয়া বিনত বাবু, গোবিন্দ্র চন্দ্র দাসের মতো মানুষ সেই দুঃসহ
স্মৃতি নিয়ে আজও বেঁচে আছেন। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এ মানুষগুলো সেদিনের সেই
ভয়াল স্মৃতি মনে করে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। যেন সেদিনের সেই আতঙ্ক আজও তাদের
তাড়া করে ফেরে।
১৩ জুন দিনটি সৈয়দপুরে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। গোলাহাট
গণহত্যা দিবস সৈয়দপুরবাসীর জন্য একটি অত্যন্ত শোকাবহ দিন। তবে নৃশংস এই
হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী গোলাহাট বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভটি আজও পূর্ণতা পায়নি।
ঘৃণীত এই হত্যাকাণ্ড স্মরণ করতে গোলাহাটে গড়ে তোলা হয়েছে একটি
স্মৃতিস্তম্ভ।
তবে এটির প্রাথমিক নির্মাণকাজ শেষ হলেও বেশ কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
মাটি ভরাট, বাতি লাগানোসহ অন্যান্য কাজ অর্থাভাবে থমকে আছে। গোলাহাট
গণহত্যার দিনটিতে হিন্দু-মাড়োয়ারি ও রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি গ্রহণ
থাকলেও বাকি সময় অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে বধ্যভূমিটি। যেটি কষ্ট দেয়
বেঁচে ফেরা কালের সাক্ষীদের। আগামী প্রজন্মের জন্য এর ইতিহাস তুলে ধরা
উচিত।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন