নিজেরাই নিজেদের মসজিদের দেয়াল ভাঙার পর গুজব রটিয়ে উগ্রবাদী কর্তৃক ৬ টি হিন্দু মন্দিরে হামলা, অগ্নিসংযোগ


ঘটনাকাল: ৯ ই ফেব্রুয়ারী, ২০১২ সাল

স্থান: নন্দীরহাট, হাটহাজারী উপজেলা, চট্টগ্রাম 

বিস্তারিত : ৯ ই ফেব্রুয়ারী, চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নন্দীরহাটস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় লোকনাথ মন্দিরে চলছে বাৎসরিক মহোৎসব। বৃহস্পতিবার সকালে মহোৎসবের একটি শোভাযাত্রা যাচ্ছিল একটি মসজিদের পাশে মেইন রোড দিয়ে। তখন মসজিদের লোকজন শোভাযাত্রায় ঢোলের শব্দ হওয়া নিয়ে বিবাদে জড়ায় মহোৎসবের ভক্তদের সাথে। শোভাযাত্রায় মসজিদের লোকজন ঢিল ছুড়ে। পাল্টা ঢিল ছোড়া হয় তখন শোভাযাত্রা থেকে, এ থেকে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া।

কিন্তু ঘটনা সেখানেই শেষ নয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সমস্যা সমাধানে পুলিশ দুই সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয়দের নিয়ে বৈঠক বসে। তবে ওই বৈঠক শুরু করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কালক্ষেপণ করা হয় বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। মুসলমান সম্প্রদায়ের এক দল বলে, বৈঠকের স্থান হবে মসজিদ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এতে রাজি হলে সন্ধ্যায় এই বৈঠক শুরু হয়। সেই বৈঠকে অনেকের সাথে উপস্থিত ছিলেন হাজীপাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক লোকমান ুএবং আরেক মুসলিম নেতা এমদাদ।

বৈঠক শুরু হয়। কিন্তু বৈঠক চলাকালেই লোকনাথ ও এমদাদের একদল মুসলমান লোকনাথ মন্দিরে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। মন্দিরে আসা বিভিন্ন দর্শনার্থীর সাত-আটটি গাড়িও ভাংচুর করে তারা।

আসল নাটক তখনও বাকী। সেদিন মাঝরাতের পর হঠাৎ পুরো হাটহাজারী উপজেলায় গুজব রটিয়ে দেয়া হয় যে হিন্দুরা মসজিদের দেয়াল ভেঙে ফেলেছে। পরদিন সকাল থেকেই এই নিয়ে ব্যপক উত্তেজনা শুরু করে মুসলমানরা।শুক্রবার সকালে হাটহাজারী এবং আশপাশের এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্রদের জড়ো করে মাইকে ঘোষণা দিয়ে আরও ৫টি মন্দির ভাংচুর এবং হিন্দুদের দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়।পুরো রাঙামাটি-হাটহাজারী-অক্সিজেন মহাসড়কের ২০ কিলোমিটার পথ ব্লক করে ফেলা হয়। ব্যাপক হামলা শুরু হয় হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে।

শ্রী শ্রী মগদেশ্বরী মায়ের মন্দির ও জগন্নাথ বিগ্রহ মন্দির তার মাঝে উল্লেখযোগ্য।এর মধ্যে মগদেশ্বরী মন্দিরে আগুনও দেওয়া হয়।

হাটহাজারী মাদ্রাসার পাশেই অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী কালীবাড়ি মন্দিরে ভাংচুরের চালায় মাদ্রাসার ছাত্ররা। মন্দিরটি তছনছ হয়ে যায়। এই মন্দরের ১০০ গজের মধ্যেই অবস্থিত হাটহাজারী মডেল থানা। হাজার হাজার মবের সামনে অসহায় দর্শক হয়ে ছিল পুলিশ। প্রশাসন থেকে ৫০০ পুলিশ, চার প্লাটুন বিজিবি ও RAB মোতায়েন হলেও এত পরিমাণ উগ্র মুসলিম জনতার সামনে তারা নিরুপায় হয়ে পড়েছিল। মন্দিরের সামনেই অবস্থিত হিন্দুদের স্বর্ণালংকারের দোকানগুলোতে ব্যপক লুটপাট শুরু হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখল বাধ্য হয়ে ১৪৪ ধারা জারি করে। তদন্ত শুরু হয় পরবর্তীতে ঘটনার।

পুলিশি তদন্তে বের হয়ে আসে যে মসজিদের দেয়াল মূলত ভাঙে জসিম নামের এক রাজমিস্ত্রী। হাজীপাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক লোকমান ুএবং আরেক মুসলিম নেতা এমদাদ রাজমিস্ত্রী জসিমকে মাত্র ৫০ টাকা বকশিসের বিনিময়ে রাতের অন্ধকারে মসজিদের দেয়াল ভাংতে বলেন। পরে জসিমকে দিয়ে এই কাজ করিয়ে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় যে হিন্দুরা মসজিদ ভেঙেছে। পরদিন সকাল থেকেই হিন্দুদের উপর শুরু হয় নারকীয় তাণ্ডব। হাটহাজারীতে হিন্দুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করা হয়। নন্দীরহাটে অনেক হিন্দুদের বাড়ি ঘরেও হামলা করা হয়। ১৭ ই ফেব্রুয়ারি জসিম সহ আটক ১০ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।

তথ্যসূত্র:

  1. https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article523353.bdnews
  2. https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/darkangleblog/29543180
  3. https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/rokonzahid/29575526
  4. https://en.m.wikipedia.org/wiki/2012_Hathazari_violence

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন